এই ৫টি সাধারণ লক্ষণই হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সারের ইঙ্গিত!

এই ৫টি সাধারণ লক্ষণই হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সারের ইঙ্গিত!

ফুসফুসের ক্যান্সার এমন এক নীরব ঘাতক, যা প্রথম দিকে শরীরে খুব একটা লক্ষণ না দেখিয়েই ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর উপসর্গগুলো সাধারণ সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস বা হাঁপানির মতো মনে হয় বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তা অবহেলা করেন। ফলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগটি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুসফুসের ক্যান্সারের কিছু সূক্ষ্ম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ আছে, যা সচেতনভাবে খেয়াল করলে আগেভাগেই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। নিচে এমন পাঁচটি উপসর্গ তুলে ধরা হলো, যা প্রায়ই অজান্তেই উপেক্ষিত থেকে যায়।

তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী কাশি
যদি কোনো কাশি তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে এবং সাধারণ ঠান্ডা বা অ্যালার্জির ওষুধে না সারে, তবে এটি হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত। এই দীর্ঘস্থায়ী কাশি কখনো শুকনো, কখনো বা কফযুক্ত হতে পারে। অনেকেই এটিকে সাধারণ সর্দি বা ব্রঙ্কাইটিস ভেবে অবহেলা করেন। কিন্তু বাস্তবে ক্যান্সারজনিত টিউমার ফুসফুসের বায়ুপথে জ্বালা সৃষ্টি করে, যার ফলে কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কাশি যদি সময়ের সঙ্গে খারাপ হয় বা স্বরভঙ্গ, রক্ত ওঠা বা ব্যথা যুক্ত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অকারণে ওজন কমে যাওয়া ও ক্লান্তি
অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া ও শরীরে ক্রমাগত ক্লান্তি ফুসফুসের ক্যান্সারের সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত উপসর্গ। অনেক সময় মানুষ এটি বয়স, কাজের চাপ বা ডায়েটের ফল ভেবে গুরুত্ব দেন না। অথচ শরীরের কোষগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অতিরিক্ত শক্তি খরচ করে, ফলে দ্রুত ওজন কমে যায়। একই সঙ্গে ক্যান্সার কোষ শরীরের শক্তি শুষে নেয়, যার কারণে দৈনন্দিন কাজেও অস্বাভাবিক ক্লান্তি দেখা দেয়।

স্বরভঙ্গ বা কণ্ঠে পরিবর্তন
যদি কোনো ব্যক্তির স্বর দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা থাকে, অথচ গলা ব্যথা বা ঠান্ডা না থাকে, তবে তা হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সারের আরেকটি ইঙ্গিত। ফুসফুসে টিউমার গঠনের ফলে কণ্ঠনালী নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কণ্ঠে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে। অনেকেই একে স্বাভাবিক গলা বসা মনে করেন, কিন্তু চিকিৎসকের পরীক্ষা ছাড়া বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় না।

শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি অনুভব
সাধারণ কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা হাঁপানির মতো অনুভব হওয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণ। কারণ টিউমার ফুসফুসের বায়ুপথ সংকুচিত করে, যার ফলে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। অনেকেই একে বয়স, স্থূলতা বা ফিটনেসের অভাব ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু অজানা কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

বুকে বা কাঁধে অজানা ব্যথা
অনেকে কাঁধে বা বুকে ব্যথাকে সাধারণ পেশির টান বা ঘুমের ভুল ভঙ্গি বলে মনে করেন। কিন্তু ফুসফুসের ক্যান্সারের টিউমার যখন আশপাশের স্নায়ু বা হাড়ে চাপ সৃষ্টি করে, তখন এমন ব্যথা তৈরি হয়। হাসি, কাশি বা গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় এই ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। এমন ব্যথা যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং তার সঙ্গে কাশি বা ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে বিষয়টি অবহেলা করা বিপজ্জনক।

ফুসফুসের ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার সফলতা অনেক বেড়ে যায়। তাই দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অকারণে ক্লান্তি, স্বরভঙ্গ বা বুকে ব্যথার মতো উপসর্গগুলো অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সচেতন থাকাই পারে এই নীরব ঘাতককে সময়ের আগেই থামাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *